ভবিষ্যতের ভয়

 

জ্যোতিষ চর্চা -- পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত

🪔🪔🪔🪔🪔🪔🪔🪔🪔🪔🪔🪔



ছোট বেলায় অরিজিৎ স্যারকে প্রশ্ন করেছিলাম বই তে ত লেখা আছে তবে শুধু শুধু পরীক্ষা করে দেখব কেন? তিনি বলে ছিলেন পরীক্ষা করলে নিজে দেখা যাবে, এবং পরীক্ষা লব্ধ জ্ঞান বইতে যথা যথ লেখা আছে কি না জানা যাবে। তাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত ও পরীক্ষা লব্ধ সিদ্ধান্ত এক কিনা প্রমাণিত হবে। 

পরীক্ষা করেছিলাম তথা কথিত জ্যোতিষী দের নিয়ে কিভাবে পারেন তারা অদৃষ্ট কে জানতে?

বেছে নিলাম তিন জন প্রাচীন, আধুনিক ও অত্যাধুনিক ক খ ও গ বাবুকে।

পরীক্ষা :- সাবজেক্ট ক

বৈঠকখানা, একদিকে বিক্রাল দেবী মূর্তি, প্রচুর পুরনো বই ও পঞ্জিকা। জন্ম তারিখ সময় জানলেন, হাত দেখলেন, কপাল দেখলেন, চোখ বন্ধ করে কি যেন বললেন, পুরনো পঞ্জিকা নিয়ে বসলেন। 

গণনা ফল  :- মকর রাশি, দেবারি গণ কুম্ভ লগ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি...

পাঞ্চ লাইন :-  সামনে

 ভাল সময় আসছে কিন্ত প্রতিকূলতা থাকবে।

বন্ধু ভাগ্য মধ্যম।

কিছু আত্মীয় বিরোধিতা করবে।

গুরুজনের শরীর ভাল যাবে না

ব্যাবসায় উন্নতি তবে চেষ্টায় চাকরি হবে।

দাবাই :- প্রতিকূলতা কাটাতে মহা গ্রহ কবচ যজ্ঞ ও গ্রহ কবচ ধারণ। অমুক দিনে অমুক সময়ে অমুক অমুক দ্রব্যাদি সহ উপস্থিতি। দক্ষিণা +  যজ্ঞ খরচ।

পরীক্ষা :- সাবজেক্ট খ

বাইরে সহকারী সঙ্গে কম্পিউটার। টুকি টাকি তথ্য তার কাছে দিতে হবে। একটি টোকেন পেলাম ও যথা সময়ে টোকেন হতে চেম্বারে পদার্পণ।

চেম্বারে ঢোকার মুখে আরবী বা উর্দু ভাষায় ( ভাষা টি জানিনা)ক্যালিগ্রাফি করে তরবারী ও সিংহ আঁকা। ঘরে নানা দেব দেবী, শান্ত থেকে মহা ভয়া বহ। কম্পিউটার এর সামনে তিনি কি যেন দেখছিলেন। ভাল সময়ে গিয়েছি কারণ সন্ধ্যা আহ্নিক এর সময়। সারা ঘর ধূমায়িত করে ব্যাকুল স্বরে সংস্কৃত উচ্চারণে দেবস্তুতি।  তবে কিছু সংস্কৃত উচ্চারণ কানে বাঁধছিল ( ধন্যবাদ গোপাল স্যার)।এবার আমার পালা।

গণনা ফল :- কুম্ভ রাশি কুম্ভ লগ্ন রাক্ষস গণ ইত্যাদি ইত্যাদি.....

পাঞ্চ লাইন :-

 খুব ভাল মানুষ আমি, পরের কষ্টে মন কাঁদে।

স্বাধীনচেতা

মানুষ উপকার নেয় কিন্ত ভুলে যায়

অতীতে অমনোযোগী থাকলেও পরে নিজের চেষ্টায় অধ্যাবসায়

চাকরি তে বাঁধা

সামনে বড় বিপদ সামলাতে হিমসিম খেতে হবে

গ্রহ দোষ রয়েছে

আত্মীয় বন্ধু দূরে চলে যাবে

শারীরিক বিশেষত লিভারের সমস্যা ভোগাবে

দাবাই :-  গ্রহ ঠিক করতে হবে, চন্দ্র, রবি , কেতু, শনি,

নব গ্রহ কবচ, মুক্ত, আমেথিস্ট, গোমেদ পারলে নীলা

পরীক্ষা :- সাবজেক্ট গ

দোকানে বসেন, প্রথমে রিসেপশনিস্ট ভাবলেও পরে বোঝা গেল ইনিই তিনি। কম্পিউটারে এন্ট্রি করলেন নাম, জন্ম তারিখ,জন্ম সময়, জন্ম স্থান, অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ জিজ্ঞেস করলেন না জানায় কম্পিউটার থেকেই বের করে নিলেন ।

গণনা ফল। :- কুম্ভ রাশি মকর লগ্ন দেবারী গণ ইত্যাদি......

পাঞ্চ লাইন :- 

পরিশ্রমের যথাযথ ফল লাভ হয় না

বন্ধু ভাগ্য মধ্যম

শুক্র দশা ভাল কিন্ত শনির বক্র দৃষ্টির জন্যে হওয়া কাজ পন্ড হতে পারে

পিতা মাতার শরীর নিয়ে বিব্রত থাকতে হবে

গন্ধ ব্যাবসায় উন্নতি(?)

দাবাই :-

শনি বার পালন

নীল রং সাদা রঙের কাপড় পরিধান

গরু কে চাল ও ছোলা খাওয়ানো প্রতি শুক্র বার

যদি চাই তবে রত্ন ধারণ।

পর্যবেক্ষণ :-

 তিন জনের আমার রাশি গণ সম্পর্কে ভিন্ন মত অথচ আমি একজন ।

আমার সম্পর্কে যে স্তুতি তা সবার ক্ষেত্রেই খাটে

( চাকুরী জীবি আমি) চেষ্টা করলে চাকরি পাব কিন্ত মন দিয়ে ব্যাবসা করলে তাতেও উন্নতি। গন্ধ দ্রব্য কি মুদি দোকান?? না কসমেটিকসের দোকান বুঝতে পাড়ি নি

বৃদ্ধ বাবা মা ঘরে থাকলে তাদের রোগ অসুখ থাকবে

আত্মীয় কেউ কেউ বিরোধিতা করে না না কারণে এবং সবার ক্ষেত্রেই

গরু কেন পথ কুকুর দেরও খাওই ভালোবাসার তাগিদে তাতে গ্রহ দোষ কাটবে জানতাম না

সিদ্ধান্ত :- প্রত্যেকে নিজের প্রসংশা শুনতে ভাল বাসে সুতরাং ওটি আপনার মন জয়ের প্রথম ধাপ, কারোর বন্ধু বা আত্মীয় সমান হয় না ও চির কাল সুসম্পর্ক বজায় থাকে না, অথচ ওই সাজেশন টি দেবার পর আমাদের মস্তিষ্ক কো রিলেট করা শুরু করে দেয়। ছোট বড় দুর্ঘটনা প্রতিদিন আমাদের জীবনে ঘটছে , ব্লেডে আঙ্গুল কাটা থেকে পা মচকানো অথচ আমরা ভাবতে থাকি ওই ভবিষ্যত বানীর দিকে। কিছু দিন আগে ব্যাট বল অঙ্কের মাধ্যমে এই গ্রুপে বোঝান হয়েছে মস্তিষ্ক শর্ট কার্ট রাস্তা কিভাবে খুঁজে নেয়, ঠিক সেই ভাবে ওই পাঞ্চ লাইন গুলি জীবনে প্রতিওমান হতে থাকে। আগে থেকে মানুষের attitude, appearance ইত্যাদি দেখে তার সম্পর্কে বলা সম্ভব, স্থূল, সাস্থজ্জ্বল কিন্ত চোখের নিচে হালকা কালি - মানুষ টি সচ্ছল কিন্ত সাম্প্রতিক সমস্যায় আছে।এ কাজ মনোবিদ রাও পারেন।  যে ভাষা জানি না সেই ভাষায় মন্ত্র বা গালি যাই হোক মন কে অভিভূত করে বৈকি। 

এর পর শুরু ব্যাবসা, বিশুদ্ধ ব্যাবসা। 

একে বলে ম্যাজিক রেমিডি, অথচ বিখ্যাত জাদুকর বার বার বলেন জাদু হয় না বিজ্ঞান বিশুদ্ধ বিজ্ঞান।

সুতরাং সময় শ্রম ও অর্থ নষ্ট ছাড়া এদের এর কোন ভূমিকা, উপকারিতা নেই।


বহু মানুষ কে দেখলাম এ ধরনের পোস্টের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে জোয়ার ভাটার কারণ, ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে বলেন। অনুরোধ একটি পোস্টের মাধ্যমে বোঝান কি ভাবে পাথর গ্রহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অথবা পাথরের ন্যানো টেকনোলজি। কেউ কোহিনুর কে নিয়ে কেন কেউ ধারণ করতে পারেনি, এত দামী জিনিষ এর পেছনে দুষ্কৃতি লেগে থাকবে না?? মোনালিসার ছবিও চুরি হয়েছিল।ব্যাক্তি গত আক্রমণ ও উপহাস নয় বরং দিন যুক্তি। পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে বিজ্ঞান সিদ্ধান্তে আসে, রাম ছাগলের ও রবীন্দ্র নাথের দাড়ি বর্তমান সুতরাং.. এটি কুযুক্তি।

শেষ করব দুটি ঘটনা দিয়ে,  

১.আড়াই বছর বয়সে মামা বাড়ি আসি ও মাধ্যমিক অবধি ওখানেই, সেই ছোট্ট বেলার প্রথম বন্ধু বাবু, ম্যাগনেট, তাবিজ কবচ,পাথর সব ধারণ করার পরেও ব্লাড ক্যান্সারে তাকে মরতে দেখেছি অপরিণত বয়সে..।

২.আমার অগ্রজ প্রতিম মানুষটির দুটি সন্তান, ছোট থেকেই মানুষ টি ওদের বিষয়ে খুব সতর্ক। ঠিকুজি নির্মাণ, উপাসনা ইত্যাদি ওদের মঙ্গল কামনায়। সময় মত গ্রহ রত্ন ধারণ ইত্যাদি। কৈশোরে পা দেবার আগেই ছোট টি আত্মঘাতী। সব মিটিয়ে উঠলে ওনাকে প্রশ্ন করে ছিলাম জ্যোতিষী এর ভবিষ্যত বাণী করেন নি? 

আজও চোখ বুজলে তার ব্যাথাতুর, হতভম্ব, দিশেহারা মুখ টি ভেসে ওঠে যা সহ্য করে উঠতে পারি না।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বকাম সমাচার

নিষিদ্ধ অঙ্গের নিদানতত্ত্ব