মহা সিন্ধুর অভ্যন্তরে
🌊রসাতলের জীবেরা🌊
পর্ব ৪
পৌরাণিক ইতিবৃত্ত অনুযায়ী পাতাল সাত ভাগে বিভক্ত | প্রত্যেক ভাগ উপরি ভাগের দশ সহস্ৰ যোজন নিয়ে অবস্থিত। এই সাত ভাগের নাম অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল,এবং পাতাল ।
পৃথিবীতে তিন ভাগ জল, এক ভাগ স্থল, এবং
বাস্তবে গভীর অতল মহাসাগর প্রায় ১•৩৩৫ বিলিয়ন কিউবিক কিলোমিটার আয়তনের জল ধারণ করে রয়েছে। এই বিপুল জলরাশি তার ভেতর গোপন করে রেখেছে বহু জীব অনুজীবেদের।
এই পর্বে আলোচনা করা যাক মহাসাগর, তার গভীরতা ও তাতে বসবাসকারী রহস্যময় জীবেদের ব্যাপারে।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ যদি মাউন্ট এভারেস্ট হয়, যার উচ্চতা ২৯০৩১•৭ ফুট,
হাওয়াইয়ের এক দ্বীপে অবস্থিত আগ্নেয় গিরি
মাউনা কেয়া Mauna Kea যার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১৩৮০৩ ফুট, কিন্তু সমুদ্রের তলায় এটি আরো ১৯৭০০ ফুট অবধি বিস্তৃত। অর্থাৎ সর্বমোট উচ্চতা যদি ধরা হয় তবে তা হবে ৩৩৫০৩ ফুট।
অপরদিকে মারিয়ানা খাদের কথা যদি ধরা হয় তবে এটি প্রায় ৩৬০৬৯•৫৫৪ ফুট গভীর।
তো ভূপৃষ্ঠ যেখানে সমুদ্র পৃষ্ঠের সাথে মেলে তাকে যদি শুন্য ধরা হয় তবে
০ ----- কন্টিনেন্টাল/ মহাদেশীয় বালুচর
০---৫০০০ ফুট ---- মহাদেশীয় ধাপ
০-- ১০,০০০ ফুট --- অতল তল বা abyssal plain
০--- ৩৬০৬৯•৫৫৪ ফুট-- মহা গভীর খাদ।
তো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অতল অবধি নিন্মলিখিত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
✓Surface microlayer অর্থাৎ সেই তল যা বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্র কে সংযুক্ত করে, মানে উপরিপৃষ্ঠ।
✓ epipelagic zone বা ফটিক জোন অর্থাৎ সমুদ্রতলের যদ্দুর অবধি রোদ্দুর এসে পৌঁছায়।
প্রায় ৬৫০ ফুট অবধি।
✓mesopelagic zone অর্থাৎ সেই তল যতদূর অবধি ক্ষীণ আলোক এসে পৌঁছায়।
৬৬০-----৩৩০০ ফুট অবধি।
✓ bathypelagic zone বা মধ্যোরাত্রি তল যেখানে নিকষ কালো অন্ধারের রাজত্ব।
৩৩০০---- ১৩০০ ফুট।
✓ abyssopelagic zone বা অতল তল
১৩০০ ফুটের নিচে।
✓ hedopelagic zone বা পাতাল
২০,০০০-- ২১৩০০ ফুট নিচে।
তো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাতাল অবধি শত প্রতিবন্ধকতা সত্বেও জীবন নিজের বাঁচার কৌশল ঠিক রপ্ত করেছে।
আলো থেকে অন্ধকারের দিকে অর্থাৎ
তমসো মা জ্যোতির্গময় এর বিপরীতে চলা যাক.....
🦁সিংহ কেশর জেলিফিশ🦁
হ্যাঁ ইনিই তিনি যিনি শার্লক হোমসকে অবসর নিতে দেন নি, মনে আছে সেই গল্প টি??
Lion's Mane jellyfish বা দৈত্যাকার জেলি ফিস বা চুল জেলি ফিস, বা আর্কটিক লাল জেলিফিশ কত নাম। নিডারিয়া পর্বের এই প্রাণীর
বিজ্ঞান সম্মত নাম Cyanea capillata।
আর্কটিক, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের দেখা মেলে।
এদের কেশর বা সুঙ্গ ২৭ মিটার অবধি লম্বা হতে পারে।
◼️বক্স জেলিফিশ ◼️
ঘন বর্গাকার স্বচ্ছ দেহের এই নিডারিয়া পর্বের প্রাণীর সমুদ্রের উপরিতলের বিষাক্ত জানোয়ার।
যদিও সবাই নয়। তবে অস্ট্রেলিয়ান বক্স জেলিফিশ
বা আরেক নাম সমুদ্র ভিমরুল , যা অস্ট্রেলিয়া,
নিউ গিনি, মালেশিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি স্থানের সমুদ্র উপকূলে পাওয়া যায়।
ঠাণ্ডা মাথার খুনে এই জানোয়ারের
বিজ্ঞান সম্মত নাম Chironex fleckeri
🌙চাঁদ জেলিফিশ🌜
চাঁদ জেলিফিশ বা বল জেলিফিশ বা
common jellyfish পাওয়া যায় উত্তর, কৃষ্ণ, বাল্টিক এবং কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে।
বিজ্ঞান সম্মত নাম Aurelia aurita।
☠️অমর জেলিফিশ🧬
“The end is just the beginning”,
T.S. Eliot সাহেবের কথাটি মনে আছে তো??
কথাটি নিডারিয়া পর্বের এই প্রাণীটির জন্যে এক্কেবারে যথাযথ। এরা জৈবিক ভাবে অমর।
প্রশান্ত থেকে ভূমধ্য সাগর সর্বত্র এদের পাওয়া যায়।
এদের মেডুসা দশা পুনরায় পলিপ দশায় রূপান্তরিত হতে পারে।
বিজ্ঞান সম্মত নাম Turritopsis dohrnii।
জেলি ফিস পর্বে আরো নানা বৈচিত্র্য বর্তমান।
এদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় তথ্য গুলি যেমন
এরা প্রাচীন বহুকোষী প্রাণী এবং ডাইনোসরের আগে থেকেই এই রসাতলে বিরাজমান।
বুদ্ধিমান এই প্রাণীর কিন্তু মগজ নেই।
এদের পূর্ণাঙ্গ দশা কে মেডুসা দশা বলে।
কিছু জেলিফিশের দাঁতের মত উপাঙ্গ আছে যার মাধ্যমে শিকার ছিঁড়ে টেনে পেটে চালান করতে পারে।
১৯৯১ সালে চাঁদ জেলিফিশ রসাতল থেকে স্বর্গে মানে অন্তরীক্ষে পারি জমিয়েছে। কলম্বিয়ায় করে এদের মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এদের এত সুঙ্গ থাকা সত্বেও এগুলি কখনোই জট পাকিয়ে যায় না।
এদের দেহের ৮৫--৯৮% তরল তাই এদের শুকিয়ে ফেললে কিছু প্রায় দেখা যাবে না।
আজ এই পর্যন্ত থাক, আমরা এখনো সূর্যালোক যে স্তর অবধি পৌঁছায় সেখানেই ঘোরাফেরা করছি।
আগামী পর্বে একটু গভীরে যাব।
তথ্য সমৃদ্ধি:::::
✓ https://www.cs.mcgill.ca/~rwest/wikispeedia/wpcd/wp/p/Pelagic_zone.htm
✓ https://animaldiversity.org/accounts/Cyanea_capillata/
✓https://www.nytimes.com/2012/12/02/magazine/can-a-jellyfish-unlock-the-secret-of-immortality.html
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন