না-নেকড়ে না-জম্বুক জীবনী

      


     🦊 🦊 না-নেকড়ে না-জম্বুক জীবনী🦊🦊

🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊🦊

    "বিদ্‌ঘুটে জানোয়ার কিমাকার কিম্ভূত,

      সারাদিন ধ'রে তার শুনি শুধু খুঁতখুঁত ৷

    কাঁচুমাচু ব'সে তাই, মনে শুধু তোল্‌পাড়—

      'নই ঘোড়া, নই হাতি, নই সাপ বিচ্ছু,

     মৌমাছি প্রজাপতি নই আমি কিচ্ছু ৷"



সুকুমার রায়ের কিম্ভুতের মতোই বিড়ম্বনা এই প্রাণীর। লেজ লাল শিয়ালের মত, মাথা নেকড়ের মতো কিন্তু, পা? লম্বা লম্বা ঠিক হরিণের মত, ইয়া বড় বড় কান!

বলছি maned wolf ম্যানড নেকড়ের কথা।

নেকড়ে বললাম বটে তবে, না এটি শৃগাল না নেকড়ে বরং এটির মিল Canidae ক্যানিডি পরিবারের কিছু সদস্যের সঙ্গে। এই ক্যানিডি পরিবারটি কি?

লাতিন শব্দ canis কথার অর্থ কুকুর, সুতরাং Canidae হল মাংসাশী কুকুরের মতন কিছু প্রাণীদের জৈবিক পরিবার বা বায়োলজিক্যাল ফ্যামিলি।

গুলিয়ে গেল যে? কুকুর এসেছে নেকড়ের কোনো এক শাখার বিবর্তনের মাধ্যমে, যদি এটি কুকুরের মতোই হয় তবে?



আচ্ছা মুশকিল, বিজ্ঞানীদের চিন্তায় চুল সাদা হল এই ভেবে যে এই প্রাণীকে শ্রেণিবিন্যাসের কোথায় স্থান দেবে!

২০০৩ সালে বহু ক্যানিডি পরিবারের মগজের গঠন পর্যবেক্ষণ করে মগজ খাটিয়ে ঠিক করা গেল যে এই ম্যানড নেকড়ে এবং Falkland islands wolf বা ফকল্যান্ড দ্বীপের নেকড়ে, এদের কে Pseudalopex বা ছদ্ম জম্বুক  গণে রাখা যাক। সিউডালপেক্স এর সমার্থক হয়ত Lycalopex লাইক্যালপেক্স যার অর্থ নেকড়ে শিয়াল বা "wolf fox"। 



কিন্তু এই ম্যানড নেকড়ে বাবাজীবন ক্যানিডি পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত নন, 

ইনি শৃগাল নন, খেঁকশিয়াল নন, কোয়োটি তো ননই।

২০১৫ সালে জিনগত সাক্ষর বা Gene signature অনুসন্ধান চলল, দেখাগেলো আজ থেকে প্রায় ২৪,০০০ বছর আগে প্লেইস্টোসিন যুগে নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে সৃষ্ট দূরবর্তী কোন প্রাণী বিকশিত হয়েছে এই ম্যানড নেকড়েতে।



কি নামে ডাকি তোমায়? স্থানীয় বিভিন্ন নাম এর যেমন ব্রাজিলে এর নাম লবো গুয়ারা, বলিভিয়ায় এর নাম বরচি।

যাইহোক  কিম্ভূতকিমাকার এই প্রাণীর 

বিজ্ঞান সম্মত নাম Chrysocyon brachyurus।

গণ Chrysocyon এর অর্থ সোনালী কুকুর। 

এই গণের এই একমদ্বিতীয় সদস্যরা প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকার সভানা তৃণভূমি অঞ্চলের বাসিন্দা।

ঘন ঘাসবন তাই লম্বা পায়ে দৌড়াতে সুবিধা। 

এরা বলতে গেলে সর্বভুক এবং ভোর ও সন্ধ্যা 

খাদ্য অনুসন্ধানের প্রিয় সময়। অবশ্য মেঘাচ্ছন্ন দিন হলে গোটা দিনটাই বেশ কাটে।

খাদ্য তালিকায় খরগোশ, মেঠো ইঁদুর, মাছ যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে নেকড়ের আপেল নামক টমেটোর মত ফল, আখ এছাড়াও জংলী মূল ও কন্দ।



দলবদ্ধ জীবন নয় বরং একলা বেড়াতে ভালোবাসে এই প্রাণী। তবে সাধারণত এরা একমপত্নীব্রতা বা monogamous এবং হ্যাঁ এরা হিসু করে এলাকা চিহ্নিত করে রাখে।

এদের মিলন কাল মোটামুটি নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে। ৬০--৬৫ দিনের গর্ভাধান কালের পর মা ম্যানড নেকড়ে ছয়টি তুলতুলে কালো লোমে ঢাকা ছানার জন্ম দেয়। প্রায় একটি বছর বাবা মায়ের আদরে লালিত হয়।



পূর্নবয়স্কো প্রাণী প্রায় ২৩ কেজি মত ওজনের হয় এবং দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় এদের উচ্চতা প্রায় ৩৫ ইঞ্চি। 



এদের দেহ প্রায় ৩৯ ইঞ্চির মত দীর্ঘ এবং লোমশ লেজ আরো ১৮ ইঞ্চি যোগ করে। দেহ হলদে বাদামী পশমে ঢাকা, গলার কাছে ও লেজের ডগা সাদা। পায়ের রং কালচে।



প্রকৃতির বিস্ময় এই লাজুক জানোয়ার আজ মানুষের কারণে অস্তিত্ব সংকটে। আগে রীতিমত শিকার করা হতো, এখন এদের বদনাম মুরগি-চোর হিসেবে, সুতরাং........

প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এদের গুরুত্ব প্রবল। এরা বীজ হজম করতে পারে না, তাই এদের মল যখন পাতা কাটা পিঁপড়ে ব্যাবহার করে নিজেদের প্রয়োজনে, অজান্তে এই দুই জীব বীজের বিস্তার ঘটায় বন থেকে বনান্তে।

এদের সঙ্গে একই পরিবারের সদস্য ফকল্যান্ড দ্বীপের নেকড়ে 

বিজ্ঞান সম্মত নাম Dusicyon australis ১৮৭৬ সালেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।



এরা পারবে তো মানুষের অপরিসীম লোভের হাত থেকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে??

তথ্যসূত্র

অন্তর্জাল

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বকাম সমাচার

নিষিদ্ধ অঙ্গের নিদানতত্ত্ব

ভবিষ্যতের ভয়