পাঁজর পিঞ্জরে

 


         🫀🫁💔পাঁজর পিঞ্জরে🫀🫁💔

        〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️

       "যাহারও লাগিয়া খাটিয়া মরি নু

             সেও ত ভুলিয়া যাবেরে

      পরাণ ও পাখি মোর পলকে উরিবে

       পরাণ ও পাখি মোর পলকে উরিবে

            ছারিয়া সকল মায়ারে......"

শুক্রবার দুপুরের দিকে রুগী না থাকায় পরাণ ডাক্তারের পশরের বাইরের বেঞ্চে বসে 

বাউল আব্দুল গান ধরেছিল, পরাণ ডাক্তার আর গ্রিল মিস্তিরি কুতুব তন্ময় হয়ে তাই শুনছিল...

👳🏾:: বুঝলা বাবারা, এই বুকটা হইল গিয়া একডা খাঁচা, ইয়ার ভিতিরি পরাণ ডা ধুক পুক করে।

🧔🏾:: কন কি বাউল ভাই, খাঁচা তো আমি বানাই, তালা চাবি লাগানো খাঁচা, পাখি কিছুতেই পলাইতে পারব না।

🧑🏽‍⚕️:: উম, বাউল আব্দুল কথাটি মন্দ বলোনি,

বুকের খাঁচা যাকে বলে থোরাসিক কেজ thoracic cage, তা মেরুদন্ড, স্টারনাম এবং পাঁজরের হাড় দিয়ে গঠিত একটি খাঁচা বিশেষ, এবং এর কাজ ভিতরের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ গুলিকে রক্ষা করা।



পাঁজরের খাঁচা বা rib cage + sternum = thoracic cage। 



তো সেই গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ গুলি কে কে জানো?

হৃদয়, ফুসফুস, রক্তবাহী গুরুত্বপূর্ন নালী ইত্যাদি।

🧔🏾:: আমি ধরেন গিয়া লোহার তার দিয়া খাঁচা বানাই, এই বুকের খাঁচায় কিয়ের তার লাগানো?

🧑🏽‍⚕️:: ১২ জোড়া হাড়ের তৈরি পাঁজরের, সঙ্গে নমনীয় তরুণাস্থির জংশন যা স্টারনাম নামক হাড়ের সংগে যোগাযোগ রক্ষা করে। এর মধ্যে আবার ৭ জোড়া পাঁজরের হাড় মেরুদন্ড ও স্টারনাম এর সাথে সরাসরি যুক্ত। এদের বলে সত্যিকারের পাঁজরের হাড় বা true ribs। পরবর্তী ৩ জোড়া পাঁজরের হাড় পরোক্ষ ভাবে স্টারনাম এর সাথে যুক্ত। এবং তার পরবর্তী ২ জোড়া শুধু মাত্র মেরুদণ্ডের সাথেই যুক্ত কিন্তু  স্টারনাম এর সাথে যুক্ত নয় মানে, তারপর ভাসমান।

তো যারা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত আছে বা মুক্ত আছে সেই সব পাঁজরদের বলা হয় মিথ্যে পাঁজর বা False ribs।



🧔🏾:: তাইতেই মাইনসের এত বুকের পাটা?

👳🏾:: জানো বাবারা, একখান সাধুর নাম শুনশিলাম, দধীচি, হ্যা নাকি নিজের পাঁজরা দিয়া দিসিলো অস্তর বানানের জন্যে।

🧔🏾:: হ হ আমি সেই বার যাত্রায় দেখসি, "বৃত্ৰাসুর বধ পালা" ঐখানে হ্যারে মারণের লাইগ্যা দধীচির  পাঁজরা দিয়া বজ্র তৈরি হইসিলো।

🧑🏽‍⚕️:: পাঁজরের অস্ত্র পূরণে নয় প্রকৃতিতেও খুঁজলে পাওয়া যায়।

উভচর বলতে শুধু ব্যাঙ বুঝি তা কিন্তু মোটেই নয়।

দেখতে টিকটিকির মত বা সরীসৃপের মত কিন্তু উভচর এমন এক ধরনের প্রাণী হল Salamander স্যালাম্যান্ডার। তেমনি একধরনের আধা জলজ স্যালাম্যান্ডারের নাম newt নিউট। 

নিউটের জীবনে তিনটি ধাপ বা দশা, 

 🦎প্রথম জলজ লার্ভা দশা, 

 🦎দ্বিতীয় স্থলচর কৈশর দশা বা eft এফট।

 🦎তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ যৌবন দশা যারা জলে নামে জননের খাতিরে নয়ত স্যাত স্যাতে জায়গায় থাকে।

তেমনি এক নিউট হল ক্ষুরধার পাঁজরার নিউট।

দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের ইব্রিয়ান পেনিনসুলা, মরক্কো নিবাসী এই নিউট Iberian ribbed newt ইব্রিয়ান পাঁজর যুক্ত নিউট ,gallipato বা Spanish ribbed newt নামেও পরিচিত।



 বিজ্ঞান সম্মত নাম Pleurodeles waltl।

ফণীমনসার কাঁটার মত গোল উচু  মত অংশ দেহের দুই পাশে রয়েছে।



 এর ভিতর দিয়ে তীক্ষ্ণ পাঁজরার হাড় বাইরে বের হয়ে আসতে পারে।



এতে কি সুবিধা হয়? যেই শিকারী ওকে ধরে মুখে পুরলো সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণ পাঁজরা কাঁটার মতো বিঁধে যায় আর সেই সঙ্গে বিষ গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় গড়ল যা শিকারীকে শিকার ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে।



🧔🏾:: এই হইল গিয়া বুকের পাটা, সাবাস।

👳🏾:: শিকারীর আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়নের জোগাড়!

🧑🏽‍⚕️:: পাঁজরার প্যাচ দেখাতে পারে আরেক জানোয়ার তবে এরা সরীসৃপ।

উড়ুক্কু গিরগিটি নাম শুনেছ?

Agamidae অ্যাগামিডা পরিবারের সদস্যদের বলা হয় ড্রাগন গিরগিটি যেমন উদাহরণ Iguana ইগুয়ানা।



তো এই অ্যাগামিডা পরিবারের একটি গিরগিটি যে সত্যি সত্যি রূপকথার ড্রাগনের মত উড়তে পারে তার নাম ড্রেকো, 



বিজ্ঞান সম্মত নাম Draco volans ড্রাকো ভোলান্স।



 আমাদের কল্পনার ড্রাগনের মতো ডানা আছে এর। তবে শরীরটা খুবই ছোট।

একে বলা হয় গ্লিডিং লিজার্ড।



তাদের ছয়টি বর্ধিত পার্শ্বীয় পাঁজর রয়েছে - তবে, জীববিজ্ঞানীদের ভাষায় তা মিথ্যা পাঁজর।



 এই মিথ্যা পাঁজর গুলি পরবর্তী গ্লাইডিংয়ের জন্য ত্বক "পাল" (বা "ডানা") প্রসারিত করতে এবং ছড়িয়ে দিতে সক্ষম।



 যখন গিরগিটি এই পাঁজরগুলি ছড়িয়ে দেয়, তখন তাদের মধ্যে চামড়ার ভাঁজটি প্রসারিত হয়, প্রশস্ত ডানায় পরিণত হয়। 



ড্রাগনরা পাখির মতো তাদের "ডানা" ফ্ল্যাপ করতে পারে না এবং তাদের এটির প্রয়োজন নেই - তারা কার্যত মাটিতে নামে না।

বরং হওয়ায় ভেসে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যাতায়াত করে।

কথায় আছে "যঃ পলায়তি  স জীবতি" সুতরাং পাঁজরের প্যাচ পয়জার দেখিয়ে কেমন পালানো যায় বলোতো?

আচ্ছা বাউল আব্দুল এবার আরেকটা গান শোনাও।

🧔🏾:: আরিববাস, হেব্বি ব্যাপার তো!

হ, বাউল এইবার আর একখান গান ধর......

👳🏾:: "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি

কেমনে আসে যায়

আমি ধরতে পারলে মন বেড়ি

দিতাম পাখির পায়....

মন তুই রইলি খাঁচার আশে

খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে

কোনদিন খাচা পড়বে খশে

ফকির লালন কেঁদে কয়"




বিষয় সাহায্যে

A Textbook of Zoology

By Ashim Kumar Chatterjee,

 Chandrashekhar Chakroborty।

Human anatomy and physiology

By Ross and Wilson।

ছবি ও অন্যান্য সাহায্যে

অন্তর্জাল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বকাম সমাচার

নিষিদ্ধ অঙ্গের নিদানতত্ত্ব

ভবিষ্যতের ভয়