জল কুরঙ্গ जानकारी

 


        🦌🦌🦌জল কুরঙ্গ जानकारी🦌🦌🦌

"বিহঙ্গ মানে যেমন পাখি, কুরঙ্গ শব্দের অর্থ হরিণ" অঙ্কের ঝিমুনি ধরা প্রথম পিরিয়ডের পর 

অর্ধেন্দু স্যারের জীবন বিজ্ঞান ক্লাস। 

আর অর্ধেন্দু স্যার মানেই নতুন গল্পের খোঁজ। সুতরাং ক্লাস শুদ্ধু সবার আবদার গল্প বলার।

তাই স্যার শুরু করলেন এইভাবে.........

🧑‍🏫:: জলহস্তী যেমন হাতি নয় তেমনি জল কুরঙ্গ জলে থাকে না বরং থাকে ডাঙায় কখনো কখনো জলা জায়গায়।

👨‍👨‍👦:: জল হরিণ, কি সেটা? কোথায় পাওয়া যায়? কেমন দেখতে?

🧑‍🏫:: বড় আজব জানোয়ার এই জল হরিণ বা

 water deer, বুঝলি, মাথায় শিং নেই মুখে আছে মাংসাশী প্রাণীদের মত বড় কুকুরে দাঁত, ইংরেজ সাহেবরা তো নামই দিয়ে ফেললেন রক্তচোষা হরিণ বা vampire deer।



মোটামুটি দেখলে এদের মিল অনেকটা কস্তুরী মৃগের সঙ্গে মেলে। কস্তুরী মৃগ করা বলত আরে যে প্রজাতির পুরুষ হরিণে জননাঙ্গ ও নাভির মাঝামাঝি থলেতে সুগন্ধি কস্তুরী গ্রন্থি থাকে।

এদেরও কুকুরে দাঁত বা ক্যানাইন দুটি বড় এবং নিচের দিকে বাঁকানো।



জীববিজ্ঞানীরা বলেন এরা নাকি সত্যিকারের হরিণ নয় বরং এদের মিল bovidae বোভিডি পরিবারের সাথে বেশী, যেই পরিবারে গরু ভেড়া মোষ ইত্যাদি রয়েছে।


পেছন পাঁকা চন্দন ফুট কাটল

🧑🏻‍🦱:: গরু ভেড়া মোষ, কপালেরই দোষ...

🧑‍🏫:: দোষ তো বটেই তবে কপালের নয় মানুষের। কেন? তা পরে আসছি।

তো কবি ভুসুকুপার কথায় আছে 

"অপণা মাংসেঁ হরিণ বৈরী। 

খনহ ন ছাড়অ ভুসুকু অহেরি ॥"

এদের মাংস যেমন মাংসাশী প্রাণীদের খাদ্য তেমনি এদের কস্তুরী গ্রন্থি মানুষের লোভের ও লাভের বস্তু।



ফলত এদের নির্বিচারে মারা হয়ে থাকে।

এরা আজ বিপন্ন ।

মানুষের দয়া দাক্ষিণ্যতে এদের সাতটি প্রজাতি টিকে রয়েছে

🦌Moschus moschiferus সাইবেরিয়ার কস্তুরী মৃগ



🦌Moschus chrysogaster অ্যালপাইন কস্তুরী মৃগ, 



পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের কস্তুরী মৃগ বা নেপাল ভুটান প্রভৃতি অঞ্চলে এদের দেখা যায়।

🦌Moschus leucogaster সফেদ পেটের কস্তুরী মৃগ,



 একসময় নেপাল, ভুটান, পাকিস্থান, চীন,ভারত

সব জায়গায় পাওয়া যেত, এখন অধিক মাত্রায় শিকার এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমিয়ে এনেছে।

🦌Moschus anhuiensis অ্যানহুই কস্তুরী মৃগ, 



চীনে ছিল বাস, চিনে নিলো ব্যস, চিন্তায় করে দিন যাপন। বিপন্ন প্রজাতির আরেকটি নমুনা।

🦌Moschus berezovskii বামন কস্তুরী মৃগ,



দক্ষিণ চীন, ভিয়েতনামের উত্তরাংশে এদের নিবাস।

রাশিয়ান পক্ষী-বিশারদ এবং নৃতাত্ত্বিক

 শ্রী মিখাইল বেড়েযোভসকি Mikhail Berezovsky

সাহেবের নাম অনুসারে এই বামন কস্তুরী মৃগের বিজ্ঞান সম্মত নাম।

🦌Moschus fuscus ধূসর বা কৃষ্ণকায় কস্তুরী মৃগ।



পূর্ব হিমালয় অঞ্চল যার মধ্যে আছে ভুটান, চীন,নেপাল, মায়ানমার প্রভৃতি, সেই স্থানে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

🦌Moschus cupreus কাশ্মীরি কস্তুরী মৃগ।



ভূস্বর্গ সহ আফগানিস্থান, পাকিস্থান প্রভৃতি স্থানে পাওয়া যেতে পারে যদি টিকে থাকে তো!

এবার বল দোষ কার?

👨‍👨‍👦:: স্যার জল হরিণের গল্প বলবেন না?

🧑‍🏫:: ও হ্যাঁ, জল হরিণের নিবাস মূলত দুই জায়গায় চীন ও কোরিয়ায়।

সেই হিসেবে এদের দুটি প্রজাতি

🦌চাইনিজ জল কুরঙ্গ, বিজ্ঞান সম্মত নাম Hydropotes inermis inermis।



প্রথমত ও প্রধানত এদের চীনের পূর্ব মধ্য অংশে ইয়াংজি নদীর অববাহিকাতে পাওয়া যেত।

এখন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এদের রপ্তানি করা হয়েছে।



পুরুষ হরিণের কুকুরে দাঁত বা ক্যানাইন ঈষৎ বড় মহিলা হরিণের চাইতে। কিন্তু উপর ক্যানাইনের পিছনে থাকা নিচের ঠোঁট এতটাই কালো যে দাঁত গুলিকে বড় ভয়ানক দেখায়।



দাঁত এবং লাফ দুটিই এদের হাতিয়ার তবে পলায়ন পটু এই জানোয়ার সাঁতারে সমান দক্ষ।



আর হ্যাঁ এরা নানারকমের আওয়াজ করতে পারে।

বিপদ বুঝলে এরা ক্লিক ক্লিক আওয়াজ করে।



চাইনিজ চিরাচরিত ঔষধি প্রস্তুতিতে এদের কোলস্ট্রাম বা শালদুধ নাকি অব্যর্থ তাই জন্মদানের পর মা হরিণ শিকার করা বা বন্দী করা হয় নির্বিচারে।

এদের মাংস ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়।

চীনকে চিনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তাই নির্বিচারে হত্যা হেথায় হামেহাল হয়।



👨‍👨‍👦:: শুধু দুধ ও মাংসের জন্য মারা পরে এই জানোয়ার গুলি?

🧑‍🏫:: হ্যাঁ এই দুধ নাকি সর্বরোগহর,

যাই হোক দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকে এদের তুত ভাই কোরিয়ান জল হরিণ।

🦌🦌 বিজ্ঞান সম্মত নাম Hydropotes inermis argyropus।



কোরিয়ায় এটিকে ক্ষতিকর জংলী জানোয়ারের আক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং এদের শিকার করলে পুরস্কার জুটতে পারে।

মজার ব্যাপার কি জানিস বনানীর দূরদূরান্তে বীজ পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে এদের জুড়ি মেলা ভার।

মলের সঙ্গে বেড়িয়ে আসা বীজ জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে ও বৃক্ষ সৃজনে সাহায্য করে।

কিন্তু কে বোঝাবে কাকে?

মুক্ত জানোয়ার বোঝেনা দেশের মাঝে সীমানা,

তাই কাঁটা তার পেরোলেই.........

ঢং ঢং ঢং

পিরিয়ড শেষের ঘন্টি ক্লাস সমাপ্ত করল বটে কিন্তু একটা মনখারাপ সঙ্গে রেখে গেল।

সভ্যতার সবচাইতে হিংস্র জানোয়ার মানুষের হাত থেকে এরা পরিত্রাণ পাবে তো???


কি মতামত আপনাদের??

সত্যি ওরা ফসলের জন্যে ক্ষতিকারক?

নাকি যা রটে তার পুরোটা বটে নয়?




তথ্য ও ছবি সাহায্যে

অন্তর্জাল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বকাম সমাচার

নিষিদ্ধ অঙ্গের নিদানতত্ত্ব

ভবিষ্যতের ভয়