রাঙিয়ে রঙিন পর্ব১
🌈🌈🔬রাঙিয়ে রঙিন🌈🌈🔬
পর্ব১
🔺🔻🔹🔹🔹🔹🔻🔺🔺🔻🔹🔻🔹🔺
নানা রঙের আয়োজনে দোল উৎসব, নানা রঙের আবির যেমন আছে তেমনি ইটকিলে পাটকিলে রঙের সমাহার।একটিবার রাঙিয়ে নিলে আপাদমস্তক অন্য মানুষে পরিণত হবে, তখন তাকে চেনাই দায়।
অথচ এই রং করেই যদি চেনার উপায় থাকে তবে?
আবোল তাবোল মনে হচ্ছে? আরে রং লাগলে স্বাভাবিক থাকবে কোথায় সবতো কিম্ভুতকিমাকার দেখাবে, তবে?
আসুন আজ রাঙিয়ে দিয়ে চিনে নেবার জগতের এক রঙচঙে সফরের জন্যে প্রস্তুত হই।
1590 সালে, দু'জন ডাচ চশমা নির্মাতা জ্যাকারিয়াস জানসেন Zacharias Janssen এবং তার ছেলে হান্স একটি নলের দুই প্রান্তে বেশ কয়েকটি লেন্স ব্যবহার করার সময় আবিষ্কার করেছিলেন যে নিকটবর্তী বস্তুগুলি বড় আকারে বর্ধিত হয়েছে।
এটি যৌগিক মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং দূরবীক্ষণ বা টেলিস্কোপের অগ্রদূত ছিল। এরপর গবেষণা যতই এগিয়েছে ক্ষুদ্র প্রায় অদৃশ্য ক্রমে দৃশ্যমান হয়েছে।
তো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু দৃষ্টিগোচর তো হল, কিন্তু মুশকিল হল সেইসব বস্তুর ক্ষেত্রে যারা প্রায় পারদর্শী বা স্বচ্ছ। বস্তুটি আছে কিন্তু তার ভিতর কি আছে তা তো বোঝা যাচ্ছে না। একটু রঙিন হলে হয়ত বোঝা যেত!!
🌈🌈রঙচঙে ইতিহাস🌈🌈
🌈William Henry Perkin উইলিয়াম হেনরি পারকিন্ ১৮৫৬ সালে পরিচয় করালেন আনিলিন aniline রঞ্জকপদার্থের সাথে।
উদ্ভিদজাত তন্তু রাঙাতে এর জুড়ি মেলা ভার।
সেই সময়কার বিজ্ঞানীরা এই রঞ্জক ব্যাবহার করতেন প্রাণী ও উদ্ভিদের কলা পর্যবেক্ষণ করতে।
🌈১৮৮০ সালে একজন জার্মান ফার্মাসিস্ট
Georg Grübler, জর্জ গ্রুব্লর জৈব রঞ্জকের
এক সনামধন্য বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
🌈হান্স খ্রিস্টান গ্রাম Hans Christian Gram একজন ডেনিশ অণুজীব বিশেষজ্ঞ ১৮৮৪ সালে বার্লিনে একটি এমন পদ্ধতির প্রস্তাব আনলেন যাতে এই প্রায় অদৃশ্য অনুবীক্ষনিক জৈব বস্তু গুলিকে রঙচঙে ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় অণুবীক্ষণ যন্ত্রে।সেই থেকে যাত্রা শুরু এবং তারপর জীবাণু রঙাবার অঙ্গানু রাঙাবার নানা রঙ আবিষ্কার হয়ে চলেছে।
আজ রাঙিয়ে দেবার জনক বা father of staining বলতে আমরা হান্স খ্রিস্টান গ্রাম Hans Christian Gram সাহেব কেই চিনি।
🌈রঙ রসায়ন🌈
রঞ্জকের জটিল গঠন অনুযায়ী রঞ্জক এই কয় প্রকার হতে পারে।
🔹Thiazine dyes থায়াজিন রঞ্জক::
থায়াজিন হেটারোসাইকেল যুক্ত রঞ্জক যেমন
🔵Methylene blue মিথিলিন ব্লু।
🔵Toluidine blue টলুইডিন নীল।
🔵New methylene blue নতুন মিথিলিন নীল।
🟢Methylene green মিথিলিন সবুজ।
🔵Azure A আসমানি এ
ইত্যাদি।
🔹Oxazine dyes অক্সাজিন রঞ্জক::
অক্সাজিন হেটারোসাইকেল যুক্ত রঞ্জক যথা
🔵Brilliant cresyl blue স্ফটিক উজ্জ্বল নীল রঞ্জক।
💜Crystal violet স্ফটিক বেগুনি রঞ্জক।
❤️Gallocyanin গ্যালোসায়ানিন রঞ্জক।
🔵Nile blue
নীলাভ নীল রঞ্জক।
🟡Nile red নীলাভ লাল রঞ্জক।
🌑Resazurin রেজাজুরিন রঞ্জক।
🔹Triphenylmethane, বা triphenyl methane
ট্রাইফিইনালমিথেন রঞ্জক।
উদাহরণ
💜Methyl violet dyes মিথাইল বেগুনি রঞ্জক
যথা
Methyl violet মিথাইল বেগুনি 2B, 6B,10B।
🟡Fuchsine dyes ফুকসিন রঞ্জক
যথা Pararosaniline প্যারারসানিলিন
Fuchsine hydrochloride salt
ফুকসিন হাইড্রোক্লোরাইড লবণ।
Fuchsine acid ফুকসিন অম্ল।
🟢Malachite green dyes
ম্যালাকাইট সবুজ রঞ্জক
ইত্যাদি।
রঙের রসায়ন অনুযায়ী এটি অম্ল
ক্ষার বা নির্বিবাদী হতে পারে।
ধুর, রস কষ হীন রসায়ন ভালো লাগছে না তাই না?
তো রং তো তৈরি এবার রাঙিয়ে দেওয়া যাক!
🌈রঙ্গাবার রকমারী 🌈
জীবাণু বা অঙ্গনু যাকেই রাঙাতে হবে তার চরিত্র কেমন তার উপর নির্ভর করে কোন ধরনের রঞ্জক ব্যাবহার হবে, অম্ল বা anionic অ্যানআইয়নিক,
ক্ষার বা cationic ক্যাটিয়নিক
না নির্বিবাদী বা নিউট্রাল।
যাই হোক আসুন রাঙিয়ে ফেলি এই পদ্ধতি গুলি অনুসরণ করে....
🧫সাধারণ রাঙানো বা simple staining::
ব্যাক্টেরিয়া রাঙাতে একটি fixed smear বা স্থায়ী লেপনের উপর একটি নির্দিষ্ট রঞ্জকপদার্থের দ্রবণ যখন ব্যাবহার করা হয় সেই সাধাসিধে পদ্ধতি হলsimple staining।
Smear বা লেপন পদ্ধতি এইরূপ
যেমন মিথিলিন ব্লু রঞ্জক ব্যাবহার করে ব্যাক্টেরিয়া রাঙানো।
🧫Negative staining বা ঋণাত্বক রঞ্জন::
যখন ব্যাক্টেরিয়ার ঋণাত্বক ধর্মী কোষপ্রাচীর ঋণাত্বক রঞ্জকে রাঙাতে চায় না তখন এই পদ্ধতির মাধ্যমে লেপন বা smear এর পশ্চাতপট রাঙিয়ে নেওয়া হয় যাতে গাঢ় পশ্চাতপটের প্রতিকূলে অস্পষ্ট সচ্ছ ব্যাক্টেরিয়া দৃশ্যমান হয়।
যেমন nigrosin নাইগ্রসিন, একটি কালো কৃত্রিম রঞ্জক যা কালো পশ্চাতপটের প্রতিকূলে ব্যাক্টেরিয়ার স্পষ্ট রূপ দেখায়।
যেমন india ink ইন্ডিয়া ইঙ্ক, আরে ভূষ কালি গোলা! কার্বনের একটি কালো পশ্চাতপটের প্রতিকূলে ব্যাক্টেরিয়ার স্পষ্ট রূপ দেখায়।
🧫Positive staining ধনাত্বক রঞ্জন::
ব্যাক্টেরিয়ার ঋণাত্বক ধর্মী কোষপ্রাচীর ধনাত্বক ধর্মী রঞ্জকে রাঙানোর কায়দাটি হল ধনাত্বক রঞ্জন।
এক্ষেত্রে উজ্জ্বল পশ্চাতপটের প্রতিকূলে রং লাগা ব্যাক্টেরিয়াটি দৃশ্যমান হয়।
ম্যালাকাইট সবুজ রঞ্জক,ফুকসিন রঞ্জক,মিথিলিন ব্লু, স্যাফ্রানিন safranin প্রভৃতি রঞ্জক এই কাজে ব্যবহার হয়।
আজ তবে এতটাই থাক।
রাঙানোর এই রংমিলান্তি চলবে আগামী পর্বে.....
চলবে তো?
বিষয় সাহায্যে
Microbiology
By Pelczar Chan Krieg।
A text book of Microbiology
By Dubey Maheshwari।
ছবি ও অন্যান্য সূত্রে
অন্তর্জাল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন