ক্ষণজন্মা খাই খাই খুড়ো
🍲🥗🥘ক্ষণজন্মা খাই খাই খুড়ো🍲🥗🥘
🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹
ভোজ বাড়িতে খগেন খাসনবিশের খাওয়া দেখা এক আকর্ষণীয় ব্যাপার। ঐতো সিরিঙ্গি মার্কা তাল পাতার সেপাইয়ের মত চেহারা,
কিন্তু পেট না ব্ল্যাকহোল বোঝা দুষ্কর। আড়াই কেজি খাসির মাংস অনুসঙ্গিক সব কিছুর সাথে খাবার পর চল্লিশটি রসগোল্লা যখন গলোদ্ধকরণ করে, সে দৃশ্য দেখে একবার এক বরযাত্রী ভিরমি খেয়ে পরে গিয়েছিল।
হারু দার চায়ের দোকানে এই আলোচনাই করছিল বিশ্বজিৎ বিশ্বাস,
রসায়ন রসিক সমীর ঘোষ একটু মুচকি হেসে বললেন........
🧒🏿:: অসম্ভব কিছুই নয়, এত সামান্য ব্যাপার, এমনও হয় যেখানে ক্ষুধা কখনোই মেটে না, সব সময় মনে হয় খাই খাই।
🧑🏻🦱:: কেন? পেট ভরলেই খিদা মিটবে, তখন খেলে বমি হয়ে যাবে যে।
🧒🏿:: তাহলে জানতে হবে ক্ষিদে পায় কেন?
মোটামুটি দুই ঘণ্টা যখন পাকস্থলী ফাঁকা থাকে তখন এটি সংকোচনের মাধ্যমে অবশিষ্ট খাদ্যাবশেষ ক্ষুদ্রান্ত্র প্রেরণ করে। ঠিক এই সময় আমাদের পেট গুরগুড় করে, এই গুরগুড়ানিকে বলা হয় borborygmus ববরিগমাস। প্রাচীন গ্রিক শব্দ βορβορυγμός (borborygmós) বহু হাত ঘুরে এই ববরিগমাস কথাটি তৈয়ার করেছে। মোদ্দা কথা হল পেট ডাকা।
তো এই গুরগুড়ানি যখন হয় তখন প্রধানত পাকস্থলী এবং কিছুটা ক্ষুদ্রান্ত্র, অগ্নাশয় এবং মস্তিষ্ক একটি হরমোন ক্ষরণ করে নাম Ghrelin ঘ্রেলিন।
এই ঘ্রেলিনকে ক্ষুধার রসায়ন বলা যেতে পারে
কারণ এটি আমাদের ক্ষিদে পাওয়ায় যাতে আমরা খাদ্য গ্রহণ করি।
🧑🏻🦱:: পেট ভরে বুঝি কি করে?
🧒🏿:: এখানেও আছে জৈব রসায়ন।
আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্র অবস্থিত মেদ কোষ এবং enterocyte এন্টারোসাইট নামের শোষক কোষ
একটি হরমোন ক্ষরণ করে নাম Leptin লেপটিন।
একে ক্ষুধা নাশক বললে বাড়িয়ে বলা হয় না।
এটি আমাদের কর্মশক্তির ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
🧑🏻🦱:: আচ্ছা খোগেন খাসনবিশ যে এত খায়, যায় কোথায়?
🧒🏿:: কেন মুখগহ্বরের পথে খাদ্যনালী হয়ে পাকস্থলীতে।
পাকস্থলীকে কম ভাবার কোনো কারণ নেই,
এটি ভাঁজ যুক্ত এবং প্রয়োজনে প্রসারণ সক্ষম।
সাধারণত পাকস্থলী মোটামুটি এক লিটারের কিছু বেশী ওই ধরা যায় ১ লিটার ৯৪৬•৩৫৩ মিলিলিটার মত আয়তন ধারণ সক্ষম।
কিন্তু প্রয়োজনে এটি ভাঁজ খুলে প্রসারিত হয়ে ৪ লিটার মত আয়তন ধারণ করার ক্ষমতা রাখে।
🧑🏻🦱:: একটু বেশী খেলে বুক আইঢাই, বমি বমি পায় কেন?
🧒🏿:: ওরে পাকস্থলী যত বাড়বে তত চাপ দেবে মদ্ধচ্ছেদার উপর ফলে সে ঠেলবে ফুসফুসকে,তাই আই ঢাই। কখনও হেছকি।
তখন সংকেত আসবে, এত নেওয়া যাবেনা বাপু কিছু খালি কর।
সংকেত পৌঁছাবে CTZ এ মানে chemoreceptor trigger zone কেমোরিসেপ্টর ট্রিগার জোনে। মস্তিষ্কের মেডুলা অবলংগটা তে একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে নাম কেমোরিসেপ্টর ট্রিগার জোন,
কাজ রক্ত সৃষ্ট রসায়ন নির্বাচন এবং এটির ওপর ভূমিকা বমন উদ্রেক।
জানা আছে কিনা জানিনা, ঘোড়ার এই কেমোরিসেপ্টর ট্রিগার জোন নেই, তাই ঘোড়া বমি করে না। এছাড়াও ঘোড়ার নিন্ম খাদ্যনালীর স্ফিঙ্কটার পেশী বেশ শক্তিশালী যেটি একমুখী ভাল্ভ হিসেবে কাজ করে।
যাকগে যাক, তো এই হল অতি ভোজনে বমন বৃত্তান্ত।
🧑🏻🦱:: তুমি যে বলছিলে 'এমনও হয় যেখানে ক্ষুধা কখনোই মেটে না, সব সময় মনে হয় খাই খাই'
সেটা কেন হয় তবে??
🧒🏿:: সে এক ভয়ানক ব্যাপার, জটিল জিন ঘটিত রোগ রে.....
তিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী নাম
Andrea Prader অ্যান্ড্রেয়া প্রাডার,
Heinrich Willi হেনরিক উইলি এবং
Alexis Labhart অ্যালেক্সিস ল্যাবার্ট ১৯৫৬ সালে দুনিয়ার কাছে প্রকাশ করল এক জটিল জিন ঘটিত খাই খাই রোগের বিবরণ।
তাদের নাম অনুসারে রোগটির নাম পড়ল
Prader–Willi syndrome সংক্ষেপে PWS
প্রাডার উইলি সিন্ড্রোম।
কেন সিন্ড্রোম?
অনেকগুলি সিম্পটম symptom বা উপসর্গের মিশ্রণ কে বলে সিন্ড্রোম বা উপসর্গনিচয়।
এতে শিশুর অন্যান্য রোগ লক্ষণ সহ যেটি হয় সেটি হল অনবরত খাই খাই বাই, শুধু ক্ষিধে আর ক্ষিধে,
ক্ষিদে মেটে না কিছুতে।
এবার আসি কেন হয়? বিষয়টি বেজায় জটিল।
তার আগে দুটি জিনিষ বুঝে নিতে হবে।
DNA 🧬 ক্রমের বা সজ্জার অদলবদলের কারণে যে ফেনোটাইপিক বা বাহ্যিক গুণাবলীর পরিবর্তন হয় যা পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় সেই সংক্রান্ত গবেষণাকে বলা হয় Epigenetics এপিজেনেটিক্স।এক্ষেত্রে যদিও ডিএনএ তে নিউক্লিওটাইড সজ্জার কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
Genomic imprinting জিনমিক ইমপ্রিন্টিং হল সেই এপিজেনেটিক ঘটনা যার কারণে জিনটি (expressed) প্রকাশিত হয় বা হয় না।ইমপ্রিন্টিং হল "কিছু জিনের এক্সপ্রেশন শুধুমাত্র বাবার থেকে আসা বা শুধুমাত্র মা এর থেকে আসা ক্রোমোজোম থেকেই হবে, অন্য এলীল নিষ্ক্রিয় থাকবে"
Prader–Willi syndrome সংক্ষেপে PWS
প্রাডার উইলি সিন্ড্রোম এমনি একটি ইমপ্রিন্টিং এর ঘটনা।
সহজ ভাষায় ১৫ নম্বর ক্রোমোজোমের কিছু জিনের বা জেনেটিক বস্তুর হারিয়ে বা মুছে যাওয়া এই রোগের কারণ বলা যায়।
এলোমেলো জেনেটিক বিচ্যুতি যা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নয়। মিথাইলেশন চেঞ্জের জন্য এপিজেনেটিক (এপিমিউটেশন), আর জেনেটিক মিউটেশন, এর জন্যও ঘটে।
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা যা এই রোগের অন্যতম লক্ষণ রুগীকে খদ্যানুসন্ধনী এমনকি খাবার চোর করে তুলতে পারে।
এই রোগের অন্যান্য লক্ষণ যেমন অতি মেদ বৃদ্ধি,
শিশু শোণিতে শর্করা বৃদ্ধি বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস,
ব্যাহত বুদ্ধি বিকাশ ইত্যাদি।
🧑🏻🦱:: যদি বুঝতেই না পারে কতটা খাবে তবে পেট ফেটে যাবে না?
🧒🏿:: যদি National library of medicine নেশনাল লাইব্রেরী অব্ মেডিসিনে প্রকাশিত তথ্য সঠিক হয় তবে বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক বিদারণ বা
পাকস্থলীসংক্রান্ত স্ফোটনের খবর মিলেছে।
যদিও এটি প্রায় বিরল ঘটনা।
🧑🏻🦱:: আমাদের খগেন খাসনবিশের কি এই রোগ আছে নাকি?
এমন সময় হারু দার দোকান থেকে ভেসে এল গরম গরম সিঙ্গাড়া ভাজার গন্ধ।
রসিক সমীর আউড়ালেন সুকুমারের সেই সাহিত্য
"খাই খাই করো কেন, এসো বসো আহারে—
খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে।
যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে,
জড় করে আনি সব— থাক সেই আশাতে।
ডাল ভাত তরকারি ফল-মূল শস্য,
আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য,
রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি,
ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি,
আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে—
খুঁজে পেতে আনি খেতে— নয় বড়ো সিধে সে!
জল খায়, দুধ খায়, খায় যত পানীয়,
জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিয়ো।
ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা,
জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা।"
তো খাই খাই খুড়োর খবরে ক্ষিপ্ত নয়ত জনগন?
কেমন লাগল এই পর্ব?
তাদের খাওয়াতে কিন্তু আনন্দ নেই লুকিয়ে আছে রোগ - কষ্ট - যন্ত্রণা।
বিষয় সাহায্যে
Human anatomy and physiology
By Ross and Wilson।
ছবি ও অন্যান্য সূত্রে
অন্তর্জাল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন